ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয় সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে, কিন্তু সরকার সহিংসতা দিয়ে ছাত্রদের দমন করার চেষ্টা করলে সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে যোগ দেয়। ছাত্ররা সফল ও হয়।চাকরির নিয়োগে কোটা ও বৈষম্য না হয় ছাত্ররা জীবন দিয়ে দূর করল। কিন্তু চাকরিতে একই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর একই লেবেলে যে আকাশ পাতাল বৈষম্য বিরাজমান, তা দূর করবে কে? বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিটি ক্যাডারেই অসন্তোষ চরম আকারে রয়েছে। স্বৈরাচার শাসকের ভয়তে কেউ এতদিন মুখ না খুললেও এখন শুরু করছে মুখ খুলতে।
আন্ত:ক্যাডার বৈষম্যৈ বঞ্চনার শিকার গণকর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গণকর্মচারী আইন প্রণীত হলেও সেই আইনের অধীনে এই বৈষম্য নিরসনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একচেটিয়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে দিনকে দিন পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য আরও বাড়ছে।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও এ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতারও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বেহিসাবি পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় কনিষ্ঠরাই অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হয়ে হয়ে বসে আছেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকায় এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, যোগ্যতা অর্জন করায় দাবিদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও দিতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রশাসনের কাঠামোসহ পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলেও তাদেরকে আগের অধস্তন পদের কাজই করতে হচ্ছে। অনেকের বসারও জায়গা নেই। এক রুমে ভাগাভাগি করে বসতে হয় অনেককে। অবশ্য এটি সচিবালয়ের দৃশ্য।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে তৎকালীন অন্যান্য ২৬ (বর্তমানে ২৫) ক্যাডারের বৈষম্য চলে আসছে। এই বৈষম্য নিরসনে একাধিক কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ হিমাগারে পড়ে আছে। অথচ প্রশাসনসহ সব ক্যাডারের কর্মচারী সরকারি কর্মকমিশনের একই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তবে ক্যাডারে ভিন্নতা থাকলেও চাকরির ১০ বছর পূর্ণ হলে যে কোনো ক্যাডারের কর্মচারী উপসচিব পুলভুক্ত হতে পারেন। আর এই পুলভুক্ত হলে তাদের প্রাথমিক যোগদানকৃত ক্যাডার পরিচিতি থাকে না। সবাই একই ক্যাডারভুক্ত গণকর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হন।
কিন্তু পদোন্নতির সময়ে কথিত কোটার দোহাই দিয়ে চলে বঞ্চনার খেলা। এতে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরাই ক্ষতিগ্রস্থ হন বেশি। যদিও সুপ্রিমকোর্ট কোটা পদ্ধতি অনুসরণের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। এ সংক্রান্তে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০০৩ সালে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো কর্মকর্তা উপসচিব হবেন তখন তার পূর্ববর্তী ক্যাডার বিলুপ্ত হবে। তখন তিনি অন্যান্য উপসচিবের সঙ্গে একীভূত হবেন। উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশকালীন ক্যাডার বিবেচিত হবে না। এসব পদে সবাই সমঅধিকার নিয়ে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। কিন্তু এই রায় না মেনে কথিত কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হলেও তাও মানা হচ্ছে না।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, ট্যাক্স, রেলওয়ে, আনসার, কাস্টমস, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ প্রায় ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপসচিবের তদূর্ধ্ব যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতির সময় কোটার ফাঁদে ফেলে বঞ্চিত করা হয়। আবার ২০০২ সালের পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে অন্তর্ভুক্ত ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও, সেটিও মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পদটি সব সময়ই প্রশাসন ক্যাডার দ্বারা পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ডিডি এলজি, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ইত্যাদি পদও প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত পদ। অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুধু মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীনের কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থায় সমমানের পদে নিয়োগ লাভ করতে পারেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোঃ আমিরুল ইসলাম
অস্থায়ী কার্যালয়: ৬৩/৫ ব্রাহ্মণ চিরণ, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা বার্তা : ০১৩১১০৬৬৫৯৯, ইমেইল: dainiktarunya@gmail.com
Leave a Reply