ভাষা শিক্ষার প্রতি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বিদেশী ভাষায় দক্ষ নয়। এর প্রধান কারণ কারিকুলামে ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব নেই।
বাংলাদেশে ৩ টি ভাষা বেশী প্রচলিত ১. বাংলা – মাতৃভাষা, মায়ের ভাষা, প্রানের ভাষা হিসেবে ২. ইংরেজি – আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ৩. আরবি- কোরআানের ভাষা, হাদিসের ভাষা, কবরের ভাষা, রেমিটেন্সের প্রধান ভাষা, জাতিসংঘের ভাষা, মুসলমানদের আবেগের ভাষা,জান্নাতের ভাষা, ৩২ টি দেশের ভাষা হিসেবে।
এছাড়া যে ভাষা গুলো বেশী জরুরি – হিন্দি ভাষা ও চাইনিজ ভাষা। বর্তমানে বাংলাদেশে ইংরেজির পরেই হিন্দি কে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ায় ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না, সে ভাষা যে কোন ভাষা ই হতে পারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে হিন্দু সম্প্রদায় ও আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করে না, অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভারতে মাদ্রাসায় ও অধ্যয়ন করে থাকে আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য। ফলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবচেয়ে বেশী রেমিট্যান্স আহরণ করে ভারতে জনগন।
ভারতের হিন্দূরা আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করলে তাদের জাত যায় না, তবে বাংলাদেশে আরবি ভাষা শিখলে জাত চলে যায়, হিন্দি ভাষা শিক্ষাকে তারা গর্বের ও গৌরবের মনে করে। অথচ আরবি ভাষা শিক্ষাটা কম গুরুত্বের নয়, মুসলমানদের জন্য প্রাথমিকভাবে আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজ। এজন্য অধিকাংশ মুসলমান আরবি পড়তে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আরবিকে গুরুত্বহীন ভাষা করার কারণে বা গুরুত্ব না দেয়ার কারণে বোঝে না।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইংরেজির মত ই আরবিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল বা প্রয়োজন ছিল। কারণ বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ, রেমিট্যান্স নির্ভরশীল অথচ আরবি অবহেলিত। ইংরেজিকে বাংলাদেশে প্রতি শ্রেণীতে যোগাযোগের ভাষার চাইতে ও সাহিত্যের ভাষা হিসেবে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়, যাতে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে কারিকুলাম না করায় লেখাপড়া শেষেও ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না, গভীরজ্ঞান তো সুদূরপরাহত।
অপরদিকে আরবিকে রেমিট্যান্স ও কোরআানের ভাষা হিসেবে কারিকুলামে এমনভাবে রাখা উচিত ছিল যাতে আরবিকে ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হয়। বাস্তবে কারিকুলামে আরবির কোন স্থান ই নাই, চাই তা ভাষা শিক্ষা হোক বা সাহিত্য হিসেবে হোক, এটা শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় রাখা হয়েছে তাও বনসাই করে। নৈতিক শিক্ষাকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে রাখার কারণে দূর্নীতির আতুরঘর বাংলাদেশ। উল্লেখ্য ইসলাম ধর্ম শিক্ষায় কোরান ও হাদিস দিয়ে দেয়া হয়েছে, কোরান ও হাদিস কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা পারবে, বুঝবে বা আয়ত্ত করবে, তার কোন মাধ্যম নাই, শুধু কোরান হাদিসকে বোঝা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
দশ বা বার বছরেও ছাত্রছাত্রীরা স্কুল বা মাদ্রাসায় ইংরেজি ও আরবিতে কথা বলতে পারে না বা যোগাযোগ করতে পারে না। এর প্রধান কারণ কারিকুলামে সমস্যা, চারপাশের পরিবেশগত বিরুপতা, ব্রিটিশদের কেরানী বানানোর সিস্টেম মাদ্রাসা ও স্কুল উভয় কারিকুলামে বিদ্যমান।
কারিকুলামে ইংরেজি ও আরবিকে প্রথম পর্যায়ে ভাষা শিক্ষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত, যাতে প্রতিটি ছাত্র- ছাত্রী ইংরেজি ও আরবিতে বাংলার মতই বলতে, বুঝতে ও লিখতে পারে।
ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব দেয়া হোক মাদ্রাসা ও স্কুল – কলেজসহ সর্বত্র,ভাষা শিক্ষার পরিবেশ করা দরকার বিদ্যাপীটসমূহে, ভাল কাজের জন্য পরিবেশ দরকার, পরিবেশ অনুকূল থাকলে ভাষা শিক্ষা সহজ হয়ে যাবে। প্রাইমারি স্কুল থেকেই ভাষা শিক্ষার শুরুত্ব দেয়া হোক, বিশেষ করে আরবি ও ইংরেজি ভাষা সে প্রত্যাশায়।
Leave a Reply