পিএইচডি করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও চিন্তার জগতে নতুন কিছু যোগ করা। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা অনার্স -মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করেন কিন্তু অধিকতর জ্ঞান অর্জনের জন্য এমফিল, পিএইচডি করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। ফলে শিক্ষার্থীদের ও তারা নতুন কিছু দিতে পারেন না।
কেউ শিক্ষক হয়ে জন্মায় না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। গবেষণা শিক্ষককে শিক্ষক করে তোলে। কিন্তু কলেজ পর্যায়ে গবেষণার তো কোনো ধারণাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন – এমফিল/এমএস, পিএইচডি, গবেষণা প্রকাশনা অবশ্যম্ভাবী, সেই একই অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ানোর ক্ষেত্রে বিসিএস শিক্ষকদের এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যারা ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় এ ধরনের ডিগ্রী অর্জন করতে চান নানান হয়রানি তাদের উৎসাহকে নস্যাৎ করে দেয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল পিএইচডি করার জন্য সুযোগ থাকে। কিন্তু বিসিএস করা শিক্ষকদের সে সুযোগ থাকে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যারা এমফিল পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনেকেই আর ও পথ মাড়াতে চান না। তারপরও অনেক কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের পর তাদের পোস্টিং হয় অজপাড়া গাঁয়ের ইন্টার কিংবা ডিগ্রী লেভেলের কলেজে। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি পিএইচডির নামে দীর্ঘ ৪/ ৫ বছর আরাম আয়েশ করেছেন। অলিখিত ভাবে হলেও এমফিল পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের শাস্তিমূলক পোস্টিং দেওয়া হয়। ফলে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।
প্রতিটি অনার্স মাস্টার্স কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত গবেষণা বাজেট থাকা আবশ্যক। যাঁরা এমফিল পিএইচডির জন্য মনোনীত হবেন তাঁদের কলেজ থেকেই স্কলারশীপ দেয়া যেতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দিতে পারলে অনার্স মাস্টার্স কলেজগুলো কেন পারবে না? প্রয়োজনবোধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন তত্ত্বাবধানে থাকবে। এতে করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিসিএস শিক্ষক এমফিল পিএইচডি করতে আগ্রহী হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এটি জরুরি আবশ্যক।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার মাধ্যমে এমফিল পিএইচডি করতে ইচ্ছুক বিসিএস কর্মকর্তাদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। আবেদন গ্রহণ আর প্রেরণের বাইরে তাদের আর কিছু করার নেই। কর্মকর্তাদের ছুটি, প্রেষণ মঞ্জুর ইত্যাদির জন্য মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এ জটিলতা দূর করার জন্য মাউশির মাধ্যমে ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করতে হবে। ক্যাডার সদস্যদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে অধিদপ্তরকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চতর শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য প্রতি বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক সুযোগ আসে। এ সুযোগ প্রকৃত শিক্ষকরা পায় না।যাদের জন্য এ ডিগ্রী আবশ্যক, যারা সারা বৎসর এ ডিগ্রী অর্জন করে সেবা দেবে তারা থাকে বঞ্চিত। এ বঞ্চনার অবসান হওয়া আবশ্যক।
বিসিএস শিক্ষকরা নিজেদের উন্নয়নের জন্য এমফিল পিএইচডি করবেন, এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষক হয়ে উঠবেন -এটিই কাম্য। গবেষণা ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর নিজ নিজ ফিল্ডে নতুন নতুন গবেষণা সম্পাদন করবেন, শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিতি করাবেন এবং এটাই হওয়া উচিত। তখনই শিক্ষার্থী শিক্ষকের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া
সহযোগী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
১৭তম বিসিএস
Implement urgent