আজ ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ইং

চাকুরির ১২ বছরে এসেও পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডারের ৩২ ও ৩৩ ব্যাচের প্রায় চার শতাধিক প্রভাষক, মাউশিতে অবস্থান কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান

আন্তঃক্যাডার এবং অন্তঃক্যাডার বৈষম্যের এক চরম নজির বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। এ ক্যাডারে ৩৩ তম বিসিএসের সদস্যরা চাকুরীতে যোগদান করে ২০১৪ সালের ৭ আগষ্ট। চাকুরীর ১২ বছরেও এসেও ৩৩ ব্যাচের প্রায় ৩৫০ এর মতো প্রভাষকের এখনো জোটেনি চাকুরী জীবনের প্রথম পদোন্নতি।

কেবল বিসিএস ৩৩ ব্যাচ না, ৩২ ব্যাচেরও প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা বিষয়ভিত্তিক বৈষম্যের কারণে আজও পদোন্নতি বঞ্চিত। তাছাড়া ৩৫ ব্যাচ পর্যন্ত সকল যোগ্যতা অর্জন করে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রায় ১২২৭ জন কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চনা একদিকে যেমন সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির কারণ অন্যদিকে তা গুণগত শিক্ষারও অন্তরায়। ধারণা করা হয়েছিল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিসিএস সাধারণ শিক্ষায় যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে পদোন্নতির মতো সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয়ও আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

৩২ ও ৩৩ ব্যাচের প্রায় শতাধিক পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা আজ পদোন্নতির দাবীতে মাউশিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তাঁরা মাউশির ডিজিসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

দেখা যায়, আজ বৈরী আবহাওয়ার বৃষ্টির মধ্যেও সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকবৃন্দ মুখে এবং বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে শিক্ষা ভবননের সম্মুখে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থান শেষে মাউশির ডিজি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আজাদ খান এবং বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশন এর আহবায়ক প্রফেসর ড. খান মাঈন উদ্দিন খান সোহেল সাথে আলোচনা এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন। অতি শীঘ্রই প্রভাষকদের বন্ধ পদোন্নতির ডিপিসি চালুর আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। গত ০৪ জুন ২০২৫ সালে প্রভাষকদের পদোন্নতির ডিপিসি বসে ছিল। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয় আত্তীকৃত শিক্ষকদের মামলার কারণে পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। অথচ আদালতের পর্যবেক্ষণে কোথাও বলা হয়নি পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে। মাউশি ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের নানা সূত্র থেকে জানা যায়, প্রভাষক পর্যায়ে পদোন্নতিতে কোর্টের মামলা মূখ্য বাধা নয়। প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পদোন্নতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শূণ্য পদের বাইরে পদোন্নতি দিতে নারাজ। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে পদোন্নতি দিলে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার পদোন্নতি হতে পারে। এ সংখ্যা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশন মানতে রাজি নয়। অতীতে দেখা গেছে মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশন বা মাউশি দরকষাকষি করে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি। বরং সময় নষ্ট হয়। তাই সংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে প্রতিবছর নিয়মিত পদোন্নতি প্রদানই হতে পারে দীর্ঘ পদোন্নতি বঞ্চনা লাঘবে উত্তম পন্থা। এদিকে পদোন্নতির দাবীতে ৩৩ ব্যাচের সদস্যরা প্রায় ৪০ দিনযাবৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি ও এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে চলেছেন তাঁদের পদোন্নতির বিষয়ে অগ্রগতি জানতে। কিন্তু উচ্চ পর্যায় থেকে কোন সুখবর না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। এর মধ্যেই আজ তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ