নিজেদের টাকায় তৈরি পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার পরিচয় বহন করছে। প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধনও দেখে ফেলেছে দেশবাসী। অপেক্ষা এখন দেশের নদী তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল উদ্বোধনের। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটি টিউবের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত। বাকিটির কাজ শেষ হলে নতুন বছরের যে কোনো সময় উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে যান চলাচলের জন্য। এই টানেল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। স্বপ্নের এই প্রকল্প এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের সঙ্গে সম্মিলন ঘটিয়েছে টানেল। এই টানেল কেন্দ্রকে করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। ঘাঁটি গাঁড়ছে ব্যাংকসহ নানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে সরকারি সিদ্ধান্তে উদ্বোধনের পর টানেল ব্যবহার শুরু হবে। আর এতেই নতুন বছরে অর্থনীতির গতি বাড়াবে জাতির জনকের নামে করা এই টানেলটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত মিলিত হয়েছে টানেলের মুখে। একই সঙ্গে টানেল যুক্ত হয়েছে পতেঙ্গা আউটার রিং রোড সড়কের সঙ্গে। বর্তমানে টানেলের মুখে চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। নগর প্রান্তে সংযোগ সড়কগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ প্রান্তে মূল সড়কটি যুক্ত হয়েছে পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে। নগর প্রান্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছয় লেনের টানেল সংযোগ সড়কটি। টানেলের ব্যবহার শুরু হলে চট্টগ্রাম মহানগরীকে পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত করতে পারবে যানবাহনগুলো। আবার চট্টগ্রামের মূল শহর থেকে লালখান বাজার হয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হয়ে যুক্ত হওয়া যাবে সরাসরি টানেলে।
টানেল টার্গেট করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন সব শিল্প-কারখানা। টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের সংযোগস্থল কালাবিবির দিঘি এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন বিশালাকার এক পোশাক কারখানা। ওই পোশাক কারখানার উৎপাদিত পণ্য টানেল হয়ে খুব কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া যাবে। অনেকটা মূল শহরের অন্য প্রান্তে থাকা অনেক কারখানার আগে বন্দরে পৌঁছানো যাবে এখানকার শিল্প-কারখানার রপ্তানি পণ্য। তাছাড়া আশপাশে রয়েছে আরও কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখাও প্রতিষ্ঠা হয়েছে ওই এলাকায়। স্থানটির এমন চিত্র কয়েক বছর আগে স্থানীয়রা কল্পনাও করেননি।
Leave a Reply