আজ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

লাগামহীন ছুটছে ডিম, একটির দাম ১৪ টাকা

ডিমকে আদর্শ খাবার হিসেবে অভিহিত করেন পুষ্টিবিদেরা। প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে দেশের নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজ ও সুলভ উৎস ডিম। তবে জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভাবে দেশের বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দামও। তুলনামূলক সস্তার ডিম এখন বাড়তি পয়সা গুনে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। রাজধানীর অলিগলির খুচরা বাজারগুলোতে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। ফলে চড়া দামের বর্তমান বাজারে ভোক্তাকে একটি ডিম কিনতেই খরচ করতে হচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকা। ডিমের লাগামহীন দামে ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সীমিত আয়ের মানুষের।সরেজমিনে গতকাল সোমবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজার গুলোতে ও ডজন প্রতি বেড়েছে ডিমের দাম। এক ডজন লাল ডিমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সাদা ডিমের ডজন ১৫০ টাকা, দেশি ২১০ টাকা ও হাঁসের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।ওইদিন রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা সাবরিনা সুলতানা বাজারে ডিম কিনতে এসে অনেকটাই চমকে যান! ডিমের ডজন ১৫০ টাকা শুনে তিনি অবাক। এই ক্রেতা দৈনিক তারুণ‍্যকে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম এতোটা বাড়ার তো কথা নয়। আজকের বাজারে অনেকে পর্যাপ্ত মাছ-মাংস কিনতে পারেন না। নিম্নবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা ডিমের দামও এখন আকাশ ছোঁয়া। এটা ভাবা যায়! মানুষ যাবে কোথায়!
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ী সবুজ উদ্দিন খান দৈনিক তারুণ‍্যকে বলেন, খামারে বিদ্যুৎ থাকে না। জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। ডিজেলের দামও বাড়তি। মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে, প্রোডাকশনও কম। অন্যদিকে বাজারে বাজারে ডিমের চাহিদা অনেক। এসব কারণেই দামও বাড়তি। এছাড়া খামারিদের অনেকে আগে লোকসান দিয়েছেন, এখন বাড়তি দামে বেচতে না পারলে তাদের ব্যবসা টিকবে না। বিশেষত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরই সব জিনিসের মতো ডিমের দামও বেড়েছে।ঈদের আগেও যে ডিমের ডজন ছিল ৯০ টাকা, ঈদের পর তা বাড়তে বাড়তে ১১৫-১২০ টাকায় ওঠে। নগরীরর ব্যস্ততম তেজগাঁও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার ১০০ পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা দরে। ফলে পাইকারি বাজারেই একটি ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ২০ পয়সা। অথচ জ্বালানির দাম বাড়ার আগে পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৯ টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তেজগাঁও বাজারে ডিমের আমদানি কমেছে। এখানে মোট ৬৫টি ডিমের আড়ত। একসময় এসব আড়তে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ডিম বেচাকেনা হতো। এখন এ সংখ্যা নেমেছে ২০ থেকে ২৫ লাখে। মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধিও ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা পোল্ট্রি ফিডের দাম ৩ হাজার ৩০০ টাকা, সোনালি ফিড ৩ হাজার টাকা ও লেয়ার ফিড ২ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে খামারিদের। এক বছরের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি পোল্ট্রি ফিডে ৯১০ টাকা, সোনালি ফিডে ৮২৫ টাকা, লেয়ার ফিডে বেড়েছে ৬৬৫ টাকা। দফায় দফায় ফিডের দাম বাড়ায় খামারিদের অনেকে ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। এরমধ্যে বেড়েছে মুরগির ওষুধের দামও। উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজার দরের সামঞ্জস্য না থাকায় খামারিরা হতাশ। এতে উৎপাদনও কমেছে। এছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ার পর ডিমের চালানে পরিবহন খরচও বাড়তি।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রচার সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দৈনিক তারুণ‍্যকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সবকিছুরই দাম বাড়তি। সে হিসেবে মুরগির খাবার, ওষুধ ও ভ্যাকসিনের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মুরগির প্রিয় খাবার সয়াবিনের দামও বাড়তি। এ কারণে গত দুই বছর পোল্ট্রি খামারিদের অনেকে ব্যবসায় ভর্তুতি দিয়েছেন। ছোট খামারিদের অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এসব কারণে উৎপাদন যেমন কমেছে, বাজারে ডিমের জোগানও এখন কম। বিপরীতে বেড়েছে চাহিদা। তাই দামও বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ফিড ছাড়াও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা গম ও ভুট্টার দাম বেড়েছে। মুরগিকে খাওয়ানো সয়াবিন তেলের দামও লিটারে ৫০-৬০ টাকা বেশি। বৈশ্বিক এ সংকটে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এর প্রভাব ডিমেও পড়েছে। তবে অন্যান্য নিত্যপণ্যের তুলনায় ডিমের দাম এখনো ততটা বেশি না।
এদিকে মুরগির খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা দৈনিক তারুণ‍্যকে বলেন, বিশ্ববাজারে সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যে খাবারগুলো মুরগিকে খাওয়ানো হয়। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেলের ব্যবহার বেড়েছে। এতে খামারিদের খরচ অনেকাংশে বেড়ে হেছে। এসব কারণে ডিমের উৎপাদন যেমন কমেছে, দামও বেড়েছে। বাজার স্বাভাবিক হলে এ ভোগ্যপণ্যটির দাম কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ