আজ ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিক্রি বেড়েছে বাইসাইকেলের

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সব সেক্টরে। দ্রব্যমূল্য, বাসভাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রিকশাভাড়া, সিএনজি অটোরিকশা ভাড়াও। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন রাজধানীর বড় একটি অংশের মানুষ। যাতায়াত খরচ বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে বাইসাইকেলে ঝুঁকছেন অনেকে। এতে গত কয়েকদিনে বিক্রি বেড়েছে বাইসাইকেলের। রাজধানীর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
মালিবাগে বাবার ছোটখাটো পরিবেশকের ব্যবসা দেখাশোনা করেন দুই ভাই বায়েজিদ ও সাজিদ। এতদিন দুজন দুটি মোটরসাইকেলে চলাচল করতেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এখন একটি মোটরসাইকেল বিক্রি করে বাইসাইকেল কিনতে এসেছেন বংশালে।
বায়েজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেল দুই ভাই মিলে চালাবো। টুকটাক কাজ এখন বাইসাইকেলে হবে। নাহলে তেলের যে দাম তাতে পথে বসতে হবে।’
দেশের বাইসাইকেলের সবচেয়ে বড় বাজার বংশাল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে শুধু বায়েজিদ-সাজিদ নন, অনেকেই আসছেন বাইসাইকেল কিনতে। গত শুক্রবারের পর থেকে বাইসাইকেলের দোকানগুলোতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে বেশি। দেখেশুনে পছন্দের সাইকেলটি কিনছেন তারা।
এদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, অন্যান্য যানবাহনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাইসাইকেল কিনতে এসেছেন তারা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল থাকলেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এখন থেকে বাইসাইকেলই ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেশি ক্রেতা। অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ায় এখন সাধারণ চাকরিজীবী থেকে শুরু করে যে কারও পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পরিবেশবান্ধব এ বাহনটি।
ভারতীয় সাইকেলের ব্র্যান্ড ‘হিরো’র পরিবেশক মজিব’স সাইকেলের কর্ণধার মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে ২০২০ সালে যখন করোনা পরিস্থিতির কারণে যানবাহন বন্ধ ছিল তখন বাইসাইকেল যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, এখন তেমনটা নয়। সে তুলনায় সামান্য বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে বেশ কিছুদিন সাইকেল বিক্রিতে দারুণ মন্দা ছিল। এখন সেটা কেটে যাচ্ছে জ্বালানি ইস্যুতে।
বাংলাদেশ সাইকেল মার্চেন্ট অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমএআইএ) তথ্যানুসারে, দেশে প্রতি বছর স্থানীয় বাজারে সাইকেলের চাহিদা ১২ লাখের কাছাকাছি। যার বাজারমূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া দেশের বাইরে প্রচুর সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ পিস সাইকেল রপ্তানি হয়েছে। বছরে রপ্তানি থেকে আয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি ডলার।
এসময় বাইসাইকেলের চাহিদা জানতে চাইলে বিবিএমএআইএ সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টি জাগো নিউজকে বলেন, গত কোরবানি ঈদ পর্যন্ত বাইসাইকেলের বিক্রি একদম কম ছিল। এখন সেটি পিকআপ করেছে। বিক্রি এখন ভালো। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বিক্রি কতটা বেড়েছে সেটা বুঝতে আরও কিছু সময় লাগবে।
তিনি বলেন, এসময় ডলারের দাম অস্বাভাবিক। কয়েক মাসে কাঁচামালের দামও বেড়েছে। বাইসাইকেলের উৎপাদন ও আমদানি উভয় খরচ বেড়েছে। সেজন্য বাজার স্থিতিশীল নয়। বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। অনেকে চাহিদা থাকলেও এলসি করতে পারছেন না। আবার অনেক ক্রেতার ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবে বাইসাইকেল কিনতে পারছেন না। সবার পরিস্থিতি নাজুক।পুরান ঢাকার বংশাল ও আশপাশে প্রায় ২০০টির মতো সাইকেলের দোকান ও আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে বাইসাইকেলের পাশাপাশি ইলেকট্রিক সাইকেলেও বিক্রি বেড়েছে। গ্রিন টাইগার ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক সাইকেল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সেলস অফিসার হেমায়েত হোসেন সোহেল বলেন, তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি বেশ বেড়েছে। তবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে এটা আরও কয়েকগুণ হতো।
জানা যায়, ঢাকার বাইরে সারাদেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার বাইসাইকেল বিক্রির খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর মিলে দেশের অন্তত ৭৫ আমদানিকারক বিদেশ থেকে সাইকেল আনছেন।
এছাড়া দেশে আরএফএল, মেঘনা, জার্মান বাংলা, আলিটা, করভোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ব্র্যান্ডের সাইকেল বিক্রি করছে। স্থানীয় বাজারের ৩০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে এসব দেশি ব্র্যান্ড। যদিও ২০১০ সাল পর্যন্ত এ বাজারের পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। আবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিও করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ