আজ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে ৩ লাখ কোটি টাকার বন্ড, ৮ শতাংশ মুনাফা দেবে

সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানতের মতোই ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে বন্ডে বিনিয়োগ করলে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ন্যূনতম ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি মাসেই পুঁজিবাজারে এরকম ৩ লাখ কোটি টাকার বন্ডের লেনদেন শুরু হচ্ছে। যা পুঁজিবাজারে ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে ইকুইটির পাশাপাশি ডেবট ঋণের বাজারও সংযোজন হচ্ছে পুঁজিবাজারে।
এ উদ্যোগ পুঁজিবাজারে জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন। এতে ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ কমবে।
অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে বন্ড মার্কেট চালু করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গা হলো বন্ড মার্কেট। এই মার্কেটটি এতদিন ধরে অকেজো ছিল। এটিকে জনপ্রিয় করতেই পুঁজিবাজারে লেনদেনের সুবিধা চালু করছি
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম
বিএসইসির তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ২৫৬টি টেজারি বন্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৩টি টেজারি বন্ডের লেনদেন চালু হবে। বন্ডগুলোর লেনদেন চালুর জন্য ইতোমধ্যে দুটি মক লেনদেন বা পরীক্ষামূলক লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাইভে যাওয়ার আগে আরও একটি মক লেনদেন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লেনদেন শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
টেজারি বন্ড কী, বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন
ট্রেজারি বন্ড হলো সরকারি বিল বা বন্ড, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। যার মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর থেকে ২০ বছর। এই বন্ডের মাধ্যমে সরকার পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এখানে বিনিয়োগ করলে টাকা হারানোর কোনো ঝুঁকি থাকবে না। বরং বছরে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পাবেন কর রেয়াত।
এতদিন এই বন্ড বিনিয়োগকারীরা কেনা-বেচা করতে পারতেন না পুঁজিবাজারে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে কেনা-বেচা হতো। জনপ্রিয়তাও ছিল না। বন্ড মার্কেটে যাতে সব বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে এর লেনদেন শুরু হচ্ছে।
সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন। এতে ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ কমবে
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
কারা কীভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন
‘এ’ ক্যাটাগরিতে পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে বন্ডগুলো। উদ্বোধনের দিন লেনদেন হবে ২৫৩টি বন্ডের, যার বাজার মূল্য ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এই ট্রেজারি বন্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। তার জন্য নতুন করে কোনো বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ বন্ডের ইউনিটের ফেসভ্যালু হবে ১০০ টাকা। লট হবে দশ হাজারটি। সরকারি টেজারি বন্ডগুলোর মেয়াদ হবে যথাক্রম ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর এবং ২০ বছর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে বন্ড মার্কেট চালু করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গা হলো বন্ড মার্কেট। এই মার্কেটটি এতদিন ধরে অকেজো ছিল। এটিকে জনপ্রিয় করতেই পুঁজিবাজারে লেনদেনের সুবিধা চালু করছি।
তিনি বলেন, এখানে একটা অসুবিধা ছিল, একবার বিনিয়োগ করার পর বিপদ-আপদে পড়লেও নির্ধারিত সময়ের আগে বের হতে পারত না বিনিয়োগকারীরা। আমরা নিয়ম সংশোধন করে বন্ডগুলোকে লেনদেন যোগ্য করছি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে বন্ড মার্কেটের সাইজ অনেক বড় হবে। এটা ইকুইটির অনেকগুণ বড় হবে। এতে দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের যে ১৫ শতাংশ অবদান রয়েছে তা বাড়বে।
আরও পড়ুন: বন্ড ছাড়বে এনসিসি ব্যাংক, জমি বিক্রি করবে ফারইস্ট লাইফ
ইকুইটি দিয়ে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়ানো যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইকুইটি দিয়ে একটা কোম্পানিকে বড় অংকের টাকা তুলতে দেব না। কারণ বেশি পেইড-আপ ক্যাপিটাল করে ফেলি। তারপর দেখা যাবে শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাই থাকবে না। সুতরাং ইকুইটি দিয়ে পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়িয়ে ফেললে লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষম করা হয়। তখন সে বাধ্য হয়ে জেড ক্যাটাগরিতে চলে যেতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ২৫৬টি টেজারি বন্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৩টি টেজারি বন্ডের লেনদেন চালু হবে। বন্ডগুলোর লেনদেন চালুর জন্য ইতোমধ্যে দুটি মক লেনদেন বা পরীক্ষামূলক লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাইভে যাওয়ার আগে আরও একটি মক লেনদেন অনুষ্ঠিত হবে. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, তাই আমরা বন্ড মার্কেট চালু করছি। এখানে বন্ড ছেড়ে উদ্যোক্তারা পাঁচশ, এক হাজার কিংবা দুই হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করবে। তারা নতুন টেক্সটাইল, পাওয়ার প্লান্ট তৈরিতে বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীরাও ভালো মুনাফা পাবেন। আর অর্থনীতিতে অবদানও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি বলেন, পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সরকারি বন্ড লেনদেন চালু হবে।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দুটি সাইড আছে। এর মধ্যে একটি হলো ইকুইটি এবং অন্যটি ডেবট। ইকুয়িটি হলো শেয়ার, আর ডেবট হলো বন্ড। আমরা শেয়ার মার্কেট নিয়ে অনেক কাজ করছি। কিন্তু বন্ড নিয়ে কাজ তেমন হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি অর্থসচিব থাকার সময় আলাপ হয়েছে। তাকে বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজের পরামর্শ দিয়েছি। তিনি দীর্ঘদিন বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজ করছেন।
শিগগিরই সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের লেনদেন চালু হবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, সরকারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছে। এরই মধ্যে ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক কাজ) হয়ে গেছে, শিগগিরই এটা লাইভে যাবে। তখন সরকারি বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হবে।
তিনি জানান, ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণের মূল কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। আমরা যদি বন্ড মার্কেট কার্যকর করি তাহলে এই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যাংক থেকে কমে যাবে। খেলাপিও কম হবে। আমরা চাই ভালো ভালো কোম্পানিগুলো ক্যাপিটাল মার্কেটে বন্ড নিয়ে আসুক। তারা বন্ড ইস্যু করুক। সেকেন্ডারি মার্কেটকে কার্যকর করতে এবং নতুন নতুন বন্ড আনতে যত ধরনের সহায়তা দরকার তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে করে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ