কয়েক বছর ধরেই বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে মন্দা চলছে। চলতি বছর শেষে বাজারে স্মার্টফোন সরবরাহে এ মন্দা ভাব আরো জোরালো হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি)। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাজারে মন্দা ভাব বজায় থাকলেও চলতি বছর অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন সরবরাহ বাড়বে। স্মার্টফোনের বাজার হিস্যার ৮৬ শতাংশের বেশি থাকবে অ্যান্ড্রয়েডের দখলে। বিপরীতে বছর শেষে কমতে পারে আইফোন বেচাকেনা। মূলত বিশ্বজুড়ে ফাইভজি সমর্থনযোগ্য স্মার্টফোনের চাহিদা বৃদ্ধি আইফোনের ব্যবসা কমানোর পেছনে ভূমিকা রাখবে। তবে টানা তিন বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে পারে বৈশ্বিক স্মার্টফোন সরবরাহ খাত। খবর সিএনবিসি ও টেলিকমলিড।
আইডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন মিলিয়ে ১৩৮ কোটি ২৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন সরবরাহ দাঁড়াতে পারে ১১৯ কোটি ৭২ লাখ ইউনিটে। বিপরীতে বছর শেষে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ১৮ কোটি ৫০ লাখ আইফোন সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের বাজারে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও আইফোন সরবরাহ আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ কমতে পারে। এর মধ্য দিয়ে স্মার্টফোনের বাজার হিস্যার ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নেবে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। আর আইফোনের দখলে থাকবে বাজার হিস্যার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ক্রমে বাড়ছে ফাইভজি স্মার্টফোনের চাহিদা। বিষয়টি বাজারে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে এগিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছে আইডিসি। অ্যাপল এখনো ফাইভজি আইফোন বাজারে ছাড়েনি। আগামী বছর আইফোন ১২ বাজারে আসবে। এ ফোনে ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা থাকবে। তখন স্মার্টফোন বাজারে আইফোনের অবস্থান ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে টানা তিন বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে ২০২০ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন সরবরাহ চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে আইডিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১৪০ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এ সময় সরবরাহ হওয়া স্মার্টফোনের মধ্যে ১৯ কোটি ইউনিটে ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে, যা মোট সরবরাহ হওয়া স্মার্টফোনের ১৪ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধির এ ধারা বজায় থাকতে পারে ২০২৩ সাল অবধি। ওই বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন মিলিয়ে ১৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহের সম্ভাবনা দেখছে আইডিসি। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আগের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে বিশ্বজুড়ে ১২৯ কোটি ৬৮ লাখ ইউনিট অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন সরবরাহ হতে পারে, যা স্মার্টফোনের বাজার হিস্যার ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ। বিপরীতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ২৫ লাখ ইউনিট আইফোন সরবরাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আইফোনের দখলে থাকবে বাজার হিস্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। মূলত ফাইভজি সমর্থনযোগ্য ডিভাইসের কল্যাণে ঘুরে দাঁড়াবে অ্যাপল।
আইডিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রোগ্রাম) রায়ান রেইথ বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটছে। ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চীন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। অন্য দেশগুলোও দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে ফাইভজি সমর্থনযোগ্য চাহিদা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি বিক্রি বাড়িয়ে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে প্রতিযোগিতায় একতরফা এগিয়ে দিয়েছে। আগামী বছর অ্যাপল ফাইভজি সমর্থনযোগ্য আইফোন বাজারে আনলে প্রতিযোগিতা সুষম হতে পারে।
Leave a Reply